খবরের সময় ডেস্ক
ডিএম পি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামকে সরাসরি ঘুষের প্রস্তাব দিয়েছেন যুগ্ম কমিশনার (লজিস্টিকস) মো. ইমাম হোসেন।
অনৈতিক এই প্রস্তাবে কমিশনার চরম ক্ষুব্ধ ও বিব্রত। তবে তিনি বিষয়টি গোপন রাখেননি। সারা জীবন নীতির সঙ্গে আপসহীন ডিএমপি কমিশনার বিষয়টিকে সহজে মেনেও নিতে পারেননি। তাই অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে দুর্নীতিপরায়ণ আখ্যায়িত করে তাকে জরুরি ভিত্তিতে বদলি করার প্রস্তাব দিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কাছে।
এদিকে এ ঘটনায় পুলিশের শীর্ষপর্যায়ে তোলপাড় চলছে। একজন উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাকে ঘুষ পার্সেন্টেজ দেয়ার প্রস্তাব সংক্রান্ত খবর শুনে রীতিমতো স্তম্ভিত ডিএমপির সব পর্যায়ের কর্মকর্তা।জানা গেছে, ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অতিরিক্ত ডিআইজি) ইমাম হোসেনকে অন্যত্র বদলির বিষয় উল্লেখ করে কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম আইজিপিকে লেখা দাফতরিক পত্র দিয়েছেন ৩০ মে।
এতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘উপর্যুক্ত বিষয়ে জানানো যাচ্ছে যে, ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস) মো. ইমাম হোসেন একজন দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা। ডিএমপির বিভিন্ন কেনাকাটায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। তদুপরি তিনি ডিএমপির কেনাকাটায় স্বয়ং পুলিশ কমিশনারের কাছে পার্সেন্টেজ গ্রহণের প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন। ফলে ওই কর্মকর্তাকে ডিএমপিতে কর্মরত রাখা সমীচীন নয় মর্মে প্রতিয়মান হয়েছে।
এমতাবস্থায় তাকে জরুরি ভিত্তিতে অন্যত্র বদলি করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হল।’ গুরুতর এ বিষয়টি ডিআইজিকেও (অ্যাডমিন অ্যান্ড ডিসিপ্লিন) দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
এদিকে অভিযোগের বিষয়ে যুগ্ম কমিশনার ইমাম হোসেন, এই প্রতিবেদককে বলেন ‘কমিশনার স্যারকে ঘুষ অফার করার দুঃসাহস আমার হয়নি। স্যার অনেক ভালো মানুষ। কিন্তু এভাবে কেন অভিযোগ করলেন আমি বুঝতে পারছি না। আমি ডিপার্টমেন্টের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের শিকার।’
প্রসঙ্গত, আছাদুজ্জামান মিয়া ডিএমপি কমিশনার হিসেবে অবসরে গেলে এই পদে আসেন ক্লিন ইমেজের কর্মকর্তা হিসেবে সুপরিচিত মোহা. শফিকুল ইসলাম। কমিশনারের চেয়ারে বসেই ডিএমপি কার্যালয়সহ প্রতিটি থানাকে একটি শৃঙ্খলার মধ্যে নেয়ার কাজে হাত দেন তিনি। দুর্নীতিবিরোধী জিরো টলারেন্সের শক্ত দেয়াল গড়ে তোলেন সর্বত্র।
ডিএমপির অভ্যন্তরীণ কেনাকাটায় দীর্ঘদিন ধরে জেঁকে বসা দুর্নীতির খবরও পেয়ে যান ডিএমপির এই শীর্ষ কর্মকর্তা। স্বয়ং কমিশনার কেনাকাটার সব বিষয়ে চুলচেরা হিসাব নিচ্ছেন- এমন সংবাদ পেয়ে কিছুটা ভেঙে পড়েন ইমাম হোসেন। কিন্তু নিজেকে স্বপদে বহাল রাখতে একপর্যায়ে কমিশনারকে ম্যানেজ করতে তিনি ঘুষ পার্সেন্টেজের বড় অফার করে বসেন।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএমপির একজন সিনিয়র কর্মকর্তা প্রতিবেদককে বলেন, ‘ডিএমপির বার্ষিক বাজেটের একটি বড় অংশ খরচ হয় কেনাকাটায়।’
অভ্যন্তরীণ কেনাকাটা বলতে কী কী বাবদ এই টাকা খরচ হয় জানতে চাইলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘ডিএমপির টেবিল-চেয়ার থেকে শুরু করে সবকিছুই লজিস্টিকস ডিপার্টমেন্ট থেকে কেনার কথা। তবে চাহিদা অনুযায়ী কেনাকাটা হয়নি কোনো সময়ই। দায়িত্বরত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের খুশি করেই লুটপাট হয়। যে কারণে ইমাম হোসেন নির্বিঘ্নে দুর্নীতি করে গেছেন।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান কমিশনার এসব দুর্নীতির টাকাকে সব সময় ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি আমাদের পুলিশ বাহিনীর অহংকার।’
ডিএমপি কমিশনারকে পার্সেন্টেজ দেয়ার যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, সেখানে কী পরিমাণ অর্থের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল শুনেছেন কিনা জানতে চাইলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘২৫% হারে প্রস্তাব দেয়ার কথা শুনেছি।
২০১২ সালে ডিএমপির তেজগাঁও জোনের ডিসি হিসেবে ইমাম হোসেন ডিএমপিতে পোস্টিং নিয়ে আসেন। এরপর তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ডিএমপির ডিসি (অর্থ), ডিসি লজিস্টিকস এবং বর্তমানে পদোন্নতি পেয়ে একই দফতরে যুগ্ম কমিশনার হয়েছেন।
আরেকজন কর্মকর্তা জানান, এর আগেও ইমাম হোসেনকে গুরুত্বপূর্ণ এই পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার প্রস্তাব করা হলেও তাকে সরানো হয়নি। বরং পদোন্নতি পেয়ে একই স্থানে গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল হয়েছেন।